অভাবজয়ী উম্মে কুলসুমের অবিশ্বাস্য স্বপ্নপূরণের গল্প

একসময় সৈয়দপুরের তিনপাই গ্রামের উম্মে কুলসুমের পরিবার ছিল চরম অভাব-অনটনে জর্জরিত। সংসারের দায়দায়িত্ব, আর্থিক সংকট এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করত। কিন্তু তবুও তিনি নিজের ভেতরে লালন করতেন পরিবর্তনের স্বপ্ন—একটি স্বপ্ন যেখানে নিজের পরিশ্রম আর সাহসের ওপর ভর করে তিনি পরিবারকে একটি স্থিতিশীল ও সচ্ছল জীবনে পৌঁছে দিতে পারবেন। তখন হয়তো তিনি ভাবতেও পারেননি যে, সেই স্বপ্ন একদিন বাস্তবেই রূপ নেবে।

২০২৩ সালে মানবিক সাহায্য সংস্থা (MSS) থেকে ৯৮,০০০ টাকা ঋণ পাওয়ার পর কুলসুমের জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। এ অর্থ দিয়ে তিনি ১.৫০ বিঘা জমিতে একটি নার্সারি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিজের শ্রম, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্যের মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই নার্সারিকে লাভজনক উদ্যোগে পরিণত করেন। গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে তিনি যেমন নিজের আয় বাড়ান, তেমনি পরিবারেও আনেন স্বস্তি।

কিন্তু কুলসুমের স্বপ্ন সেখানেই থেমে থাকেনি। নার্সারির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ২০২৪ সালে MSS থেকে আরও ১,৪০,০০০ টাকা ঋণ নেন। নতুন এই মূলধনকে কাজে লাগিয়ে তিনি ৬ বিঘা জমিতে কমলা, মাল্টা ও পেয়ারার বাগান গড়ে তোলেন। সময়, পরিশ্রম ও যত্নের ফলস্বরূপ বাগানটি দ্রুতই ফল দিতে শুরু করে। এখন তিনি এই বাগান থেকে নিয়মিত সুষম আয় করছেন, যা তার পরিবারের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

নিজের কঠোর পরিশ্রমের উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ইতোমধ্যেই নতুন জমি কিনেছেন এবং একটি নতুন দালানবাড়ি নির্মাণের কাজও হাতে নিয়েছেন। পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা, স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের প্রতি নতুন আশার আলো।

উম্মে কুলসুমের এই সাফল্যের গল্প একটি শক্তিশালী প্রমাণ—সঠিক সহায়তা, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং অক্লান্ত পরিশ্রম থাকলে জীবনের যে কোনো বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব। MSS-এর সহায়তা কেবল তাকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেনি, বরং তার পরিবারকেও একটি উন্নত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ জীবনের পথে এগিয়ে দিয়েছে।

তার এই যাত্রা দেশের হাজারো নারী উদ্যোক্তার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে—যারা নিজের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছেন।

  • SHARE

Latest Stories