এমএসএস আই কেয়ার প্রজেক্ট, অন্ধত্ব নয়, আলোর দিশা

বাংলাদেশে অন্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। যার মধ্যে সাড়ে ছয় লাখের বয়স ৩০ এবং ঊর্ধ্ব। প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরও এক লাখ ৩০ হাজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার মূল কারণ হলো ছানিজনিত সমস্যা, যার হার ৭৩.৩৯ শতাংশ এবং চোখের আকারের ত্রুটিজনিত কারণে যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, তার হার ৮.৮৭ শতাংশ।

বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে। সেখানে দরিদ্র বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশে ৯০০ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলেও তাদের ৯০ শতাংশের অবস্থানই নগরকেন্দ্রিক। প্রচলিত ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় এসে চক্ষু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা দূর করতে মানবিক সাহায্য সংস্থা এমএসএস আই কেয়ার প্রজেক্টের কিছু কর্মসূচি রয়েছে। যার অন্যতম লক্ষ্য হলো, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব বিনামূল্যে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, চক্ষু স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাদান, সক্ষমতা ও চক্ষুসেবা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। দারিদ্র্যের কারণে কেউ আর অন্ধ থাকবে না- এই প্রত্যয়ে এমএসএস আই কেয়ার প্রজেক্ট বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব দূরীকরণে ২০১৪ সাল থেকে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস কর্মসূচির অন্যতম কার্যক্রম হলো, চক্ষুশিবির বাস্তবায়ন। যার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক চক্ষু রোগীকে মৌলিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যায় এবং ছানি রোগী শনাক্তকরণ সম্ভব হয়। মানবিক সাহায্য সংস্থার আই কেয়ার প্রজেক্ট মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত মোট ৫৬টি চক্ষুশিবির গ্রামাঞ্চল, প্রত্যন্ত অঞ্চল, জেলা, উপজেলায় বাস্তবায়ন করেছে। মোট ২২,৭১৮ জন রোগী এই চক্ষুশিবির থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। প্রায় ১৫০০ জন রোগীর চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে ১৩৩৫ জন ছানি রোগী। অপারেশন বা সার্জারি সেবা দেওয়ার জন্য আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫টি হাসপাতালের সঙ্গে পার্টনার হসপিটাল হিসেবে সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এই হাসপাতালগুলো চক্ষুশিবিরে কারিগরি এবং হাসপাতালে সার্জারি সহায়তা দিয়ে আসছে। চোখের দৃষ্টির স্বচ্ছতার জন্য বিনামূল্যে চশমা বিতরণ করা হয়েছে ৪৭৭৬টি এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে ৫২৯ রোগীকে।

আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো, স্কুল সাইট টেস্টিং প্রোগ্রাম। এ কর্মসূচির লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত

শিশুদের মধ্যে স্বল্প দৃষ্টি ও অন্যান্য চক্ষুরোগ শনাক্তকরণ, প্রয়োজন অনুযায়ী বিনামূল্যে চশমা, ওষুধ বিতরণ এবং শনাক্তকৃত রোগীদের দ্রুত রেফারাল সুবিধা প্রদান। সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে মৌলিক চক্ষুসেবা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। স্কুল সাইট টেস্টিং প্রোগ্রামে প্রয়োজনীয় চক্ষু পরীক্ষার যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিশুদের চোখ পরীক্ষা করা হয়। ক্লাসে ফ্লায়ার, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড বিতরণ করা হয় শিশুদের সচেতন করে তোলা এবং এগুলো যেন তারা তাদের পরিবারের সবাইকে জানাতে পারে। এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত মোট ১৩টি স্কুলে সাইট টেস্টিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ১৩টি স্কুলের মোট ২৯৬৩ সুবিধাবঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থীকে চক্ষু চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার অন্ধ শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে ১২ হাজারের অধিক শিশু, যার বেশিরভাগই সুবিধাবঞ্চিত। ছানি অপারেশন না করার কারণে মানুষ অন্ধত্ব বরণ করে। আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস সেসব শিশুর কাছে পৌঁছে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানান এমএসএসের সভাপতি ফিরোজ এম হাসান।

এমএসএস আই কেয়ার প্রজেক্টের তহবিল গড়ে উঠছে কিছু মানবতাসম্পন্ন, দরদি ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও করপোরেট অনুদান এবং সেই সঙ্গে মানবিক সাহায্য সংস্থার জাকাত ফান্ড এবং এমএসএস কর্মসূচি থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা। পাশাপাশি সমাজের সক্ষম, সামর্থ্যবান এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমএসএস আই কেয়ার প্রজেক্টে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। যাতে মাত্র তিন হাজার টাকায় অপারেশনের মাধ্যমে ছানিযুক্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার হাত থেকে একজন সুবিধাবঞ্চিত রোগীকে রক্ষা করা সম্ভব, যা জগৎকে দেখার জন্য একটি মূল্যবান উপহার হতে পারে।

  • SHARE

Latest Media Coverage

DAWN AFTER DARK
31 January, 2020