দরিদ্রতার জন্য কেহ অন্ধ রবে না
Posted - 30 April, 2018 Published on - ইত্তেফাক
সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব বিনামূল্যে সনাক্তকরণ ও চিকিত্সা প্রদান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, চক্ষু স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাদান, সক্ষমতা ও চক্ষু সেবা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা
রাবেয়া বেবী
আমেনা বেগমের বয়স প্রায় ৮০ বছর। অনেক দিন যাবত্ তিনি চোখে দেখতেন না। আমনা ভাবতেন এটা তার ভাগ্য। ওপরওয়ালা তার শেষ জীবনে কোন পাঁপের শাস্তি দিতে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছেন। তার কিছুই ভালো লাগত না। নীলফামারির আমেনার এই ধারনা বদলে গেল অল্পদিনের মধ্যে। চোখের ছানি অপারেশন করার পর আমেনা ঠিক মাঝ বয়সের মত চোখে দেখতে পান। দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। আর হাসিখুশিতে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন। এমন আর এক গল্প বলেন, ৭০ বছর বয়সের সালেহা। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে চেয়েচিন্তে সালেহার দিন যেত। স্বামী তার অনেকদিন আগেই গত হয়েছে। তাকে দেখার মতো আর কেউ নেই। অসহায় সালেহার অসহায়ত্ব কয়েকগুণ বেড়ে যায় গত এক বছরে। সালেহা ক্রমেই চোখে কম দেখতে শুরু করেন। ঘরে আটকে যেতে থাকে তার জীবন। একসময় তিনি জানতে পারেন চিকিত্সক এসেছেন চোখের পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ দেবেন বলে। সেখানে গিয়েই বদলে যায় তার জীবন। দুই চোখের ছানি অপসারন করা হয়। সে এখন পরিস্কার দেখতে পান। তাদের অপারেশনে কোন টাকাই তাদের দিতে হয়নি। চোখ অমূল্য সম্পদ, এই সম্পদকে অনেকে অর্থের অভাবে হারাতে বসেন। তাদের জীবনে অমূল্য সম্পদ চোখ ফিরিয়ে দিয়ে সুন্দর পৃথিবীকে আবার দেখার সুযোগ দিচ্ছে মানবিক সাহায্য সংস্থার আই কেয়ার প্রজেক্ট।
‘দরিদ্রতার জন্য কেহ অন্ধ রবে না’ প্রতিপ্রাদ্য করে বাংলাদেশে চক্ষু সেবাদান কাজে অভিজ্ঞ হয়ে আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস (ইসিপি-এমএসএস) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে। যার উদ্দেশ্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব বিনামূল্যে সনাক্তকরণ ও চিকিত্সা প্রদান, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, চক্ষু স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষাদান, সক্ষমতা ও চক্ষু সেবা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। প্রকল্প উপদেষ্টা তারিকুল গনি জানান, তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে তারা কাজ করেন। প্রথমত প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব দূর কারা, দ্বিতীয়ত স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তৃতীয়ত চক্ষু চিকিত্সা সকলের প্রবেশগম্যতা। তাদের কার্যক্রম বেশির ভাগ উত্তরবঙ্গে। কারণ এই এলাকায় ছানির সমস্যা বেশি। তারা বিদেশী কোন অর্থায়নে নয় বরং সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের ডোনেশনে এই চক্ষুসেবা দিয়ে থাকেন।
প্রজেক্ট-এ মাত্র ৩ হাজার টাকায় একজন ব্যক্তির ছানি অপারেশন করে লেন্স লাগানো হয়। কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে বলেন, অনেক চক্ষু হাসপাতালের সাথে আমাদের চুক্তি আছে। তারা তিন হাজার টাকা নিয়ে বাকি সাপোর্ট দিয়ে অপারশন করে দেন। গনি বলেন, যে কেউ তিন হাজার টাকা দিয়ে যেমন একজনকে ছানি অপসারনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। আবার কোন প্রতিষ্ঠান এক ক্যাম্পের ১৫-২০ জন রোগীকেও এই সুযোগ দিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজ করে। দেশে ৯০০ জন চক্ষু চিকিত্সক রয়েছে। ৮০ শতাংশ চক্ষু রোগী গ্রামে থাকে। যেখানে এই চিকিত্সা সেবা নেই বললেই চলে কারণ ৯০ শতাংশ চক্ষু চিকিত্সক শহরকেন্দ্রিক। অল্পসংখ্যক ছানি অপারেশনের প্রধান কারণগুলো হলো এই বিষয়ে সচেতনতার অভাব, অপারেশনে ভীতি, প্রশিক্ষিত চক্ষু চিকিত্সকের অভাব, সুসজ্জিত চক্ষু চিকিত্সা সুবিধার অভাব ও প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠীর নিকট চক্ষুসেবা না পৌঁছানো মূল প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার অন্ধ শিশু রয়েছে যাদের মধ্যে ১২ হাজার শিশু অন্ধ হয়েছে ছানি অপারেশন না করার কারণে। এমন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে নিসন্দেহে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। জানা যায়, এ যাবদ এক হাজার তিনশ তেতাল্লিশ জনের ছানি অপসারন করেন। ২০১৭ সালে করেন ৭৯৭ জনের। নতুন প্রজন্ম যেন অন্ধত্ববরণ না করে সেজন্য তাদের স্কুল সাইট টেষ্টিং প্রোগ্রাম বিদ্যমান আছে।
SHARE