হাসনা হেনার গল্প
Posted - 28 October, 2020 Published on - Daily Ittefaq
‘আর কতদিন বসে থাকা যায়। করোনা ভাইরাসের কারণে তিন মাস ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল। অনেক ক্ষতি হইছে। আমার নিজের পরিবার ও ১৩ জন শ্রমিকের বেঁচে থাকার কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অহন ফ্যাক্টরি চালু করছি। মানবিক সাহায্য সংস্থা পাশে ছিল। সাহস জুগাইছে।’ কথাগুলো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা থানার গোলাকান্দাইল এলাকার বাসিন্দা হাসনা হেনার। বিশ্ব জুড়ে থমকে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে হাসনা হেনা যেন জেগে ওঠার এক খণ্ড আলো জ্বেলে দেয়।
করোনাকালের কোনো প্রকার আতঙ্ক নেই তার চেহারায়। দীপ্ত চাহনি। কণ্ঠও বেশ সতেজ। কথা শেষ হয় না। বলেন, ‘এক সময়ে আমি স্থানীয় একটা গার্মেন্টসে কাজ করতাম। এখন আমি নিজেই এইচ এইচ এক্সপোর্ট কালেকশনের মালিক’ কথাগুলো বেশ গর্বচিত্তে বলছিলেন ৩৩ বছর বয়সি হাসনা হেনা। বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, এইচ এইচ এক্সপোর্ট কালেকশনের পুরো নাম হলো হাসনা হেনা এক্সপোর্ট কালেকশন। মানবিক সাহায্য সংস্থা থেকে দ্বিতীয় দফা তিনি অগ্রসর ঋণ (মাঝারি উদ্যোগ) গ্রহণ করেছেন। এই সহায়তা তার জীবনের পরিসর বড় করেছে। পথকে করেছে প্রশস্ত।
স্বামী জসীম উদ্দিন এবং সে নিজে স্থানীয় একটা গার্মেন্টসে কাজ করতেন। নিজেদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পরিবারের আরো আর্থিক সচ্ছলতার কথা ভেবে নিজেরা কিছু করবার সিদ্ধান্ত নেন। গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু হয় স্বল্প পরিসরে ম্যানুয়াল মেশিনের মাধ্যমে শুধু গেঞ্জি তৈরির কাজ। এই ব্যবসার সফলতায় তারা আরো এগিয়ে যাবার কথা ভাবলেন। এমন একটা সময়ে হাসনা হেনা মানবিক সাহায্য সংস্থার সদস্য হলেন। সংস্থা থেকে ঋণসহায়তা নিয়ে তার কাজের ক্ষেত্র বড় করলেন। চাহিদা যাচাই করে গেঞ্জির পাশাপাশি শুরু হলো মেয়েদের ট্রাউজার তৈরির কাজ।
বর্তমানে তার ফ্যাক্টরিতে হাসনা হেনা ও তার স্বামীসহ মোট ১৫ জন শ্রমিক ১৪টি ইলেকট্রিক্যাল মেশিনে কাজ করছেন। করোনাকালে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। নিজের ফ্যাক্টরি থেকে তৈরিকৃত মাস্ক ব্যবহার করছেন নিজে এবং অন্যরা।
এই উদ্যোগে মাসিক আয় ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকদের বেতন, ঘর ভাড়া, বিদ্যুত্ বিল বাবদ মাসিক ব্যয় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। ১৫ জন শ্রমিকের মধ্যে রয়েছে পুরুষ ৮ ও নারী ৭ জন। ১৩ জন শ্রমিকের প্রত্যেককে মাসিক ৫ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি দিচ্ছেন। এই ব্যবসায়ে প্রতি মাসে নিজের নিট লাভ থাকছে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। কখনো এর চেয়ে বেশিও হয়।
হাসনা হেনার তিন সন্তান। স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করছে। হাসনা হেনার স্বপ্ন ফ্যাক্টরিকে আরো বড় করা। তিনি আশা করেন সেই স্বপ্ন পূরণে মানবিক সাহায্য সংস্থা বরাবরের মতো তার পাশে থাকবে। সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মানবিক সাহায্য সংস্থার প্রতি।
SHARE